🛡️ সেলফ ডায়াগনোসিস করুন

জাদু, জ্বিন, বদনজর, ওয়াসওয়াসা ইত্যাদি সমস্যা কি আপনার আছে?
মাত্র ২ মিনিটেই যাচাই করুন!

🕰️ সুস্থ হতে আমার এত দেরি লাগছে কেন? – একটি বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণ

 

রুকইয়াহ করার পরও অনেকে অভিযোগ করেন—

“আমি তো নিয়মিত রুকইয়াহ করছি, তারপরও সুস্থ হচ্ছি না কেন?”
অন্যদিকে কেউ মাত্র দুইদিন রুকইয়াহ করে হতাশ হয়ে পড়েন।

আসুন জেনে নিই:
🔎 সুস্থতা দেরি হওয়ার পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে
🔎 এতে আপনি কী করবেন এবং কী করবেন না

 

🧠 ১. আশা আর বাস্তবতার সংঘাত

অনেকে মনে করেন, রুকইয়াহ মানেই ম্যাজিক! দুইদিন পড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সত্যি হলো – এটি একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া, যেখানে শয়তানের সঙ্গে লম্বা যুদ্ধ করতে হয়। যেমন ক্যান্সারের চিকিৎসায় বছরও লেগে যেতে পারে, তেমনি জিন-জাদুর চিকিৎসাতেও সময় লাগে।

🔹 উদাহরণ: কেউ ৩ দিনে সুস্থ হন, আবার কেউ ২ বছরেও পুরোপুরি মুক্তি পান না।

 

🧪 ২. সমস্যা যত গভীর, সময় তত বেশি

  • অনেক সময় জাদুকর একাধিকবার জিন পাঠায়

  • এক জিন চলে গেলে অন্য জিন শরীরে প্রবেশ করে

  • কিছু জিন রুকইয়াহতেই মারা যায়

  • কারো সমস্যায় থাকে পুরনো গুনাহ, হারাম রিজিক, তাবিজ ইত্যাদি—যা চিকিৎসা বিলম্বিত করে

🔸 ফলাফল: প্রতিটি রোগী ভিন্ন, সুতরাং সময়ও ভিন্ন হবে।

 

⚔️ ৩. এটা শুধু চিকিৎসা নয়, বরং যুদ্ধ

শয়তান হাত গুটিয়ে বসে থাকে না। এক রাস্তা বন্ধ হলে, সে আরেক রাস্তায় আক্রমণ করে।

  • কখনো হয় বেহুঁশ হওয়ার লক্ষণ

  • তারপর হয় ওয়াসওয়াসা

  • পরে হয় ইবাদতে অলসতা
    এইভাবে ধাপে ধাপে যুদ্ধ চালাতে হয়।

👉 তাই ধৈর্য হারালে চলবে না। যুদ্ধ চলবে যতক্ষণ না আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হোন।

 

৪. দেরিতে সুস্থতা মানেই ব্যর্থতা নয়

রাসূল ﷺ নিজেই ছিলেন সবচেয়ে নেক, তাঁর দোয়া কবুল হতো—তবুও তিনি ২০ বছরের বেশি সময় কাফেরদের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন।

🔖 কুরআনে বলা হয়েছে:

“এই জয়-পরাজয়ের দিনগুলো আমরা মানুষের মধ্যে অদলবদল করি, যেন আল্লাহ দেখে নিতে পারেন কারা ঈমান এনেছে।”
[সূরা আলে ইমরান: ১৪০]

🟢 শিক্ষা: ধৈর্য ধরাই হল ঈমানের পরীক্ষা।

 

💭 ৫. কখন চিন্তিত হওয়া উচিত?

নিচের ২টি অবস্থায় চিন্তিত হওয়া উচিত:

1️⃣ রুকইয়াহ করেও কোনো উন্নতি নেই – মাসের পর মাসেও না।
2️⃣ রুকইয়াহ করলে কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই – ভালোও না, খারাপও না।

👉 তখন পুরো সিস্টেম রিভিউ করতে হয়:

  • ফরয গোসল ঠিক আছে কি না

  • বাড়িতে তাবিজ বা ছবি আছে কি না

  • গুনাহের অভ্যাস বাদ দেওয়া হয়েছে কি না

  • নিয়ত সঠিক কি না

  • রুকইয়াহ নিয়মিত ও ঠিকভাবে হচ্ছে কি না

 

🛠️ ৬. অস্ত্র আছে, কিন্তু হাতে শক্তি নেই?

রুকইয়াহ মানে আপনি কুরআন দিয়ে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু হয়তো

  • আপনার নিয়ত দুর্বল

  • আপনার হাত (ইমান/আত্মশুদ্ধি) দুর্বল

  • বা অস্ত্র ঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না

🔍 তাই নিজেকে যাচাই করুন। হয়ত বড় কোনো ভুল থেকে যাচ্ছে।

 

📌 ৭. রুকইয়াহ ধীরে করুন, কিন্তু নিয়মিত করুন

যদি রুকইয়াহ করে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসে, তাহলে একেবারে সিম্পল পদ্ধতি ব্যবহার করুন:

✅ ৩ কুল এবং সূরা ফাতিহা পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, তা পান করুন
✅ দিনে কিছু সময় রুকইয়াহ অডিও শুনুন
✅ দৈনিক ইস্তিগফার ৭০–১০০ বার করুন
✅ প্রত্যেক সালাতের পর ২০ বার “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলুন

 

🕌 ৮. আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দিন

  • মাহরাম-নন মাহরাম পর্দা মেনে চলুন

  • গান-বাজনা বর্জন করুন

  • নামাজ ও চোখের হেফাজত করুন

  • রাতে তাহাজ্জুদের চেষ্টা করুন

🔹 আপনি যত বেশি আত্মশুদ্ধি করবেন, তত বেশি আল্লাহর সাহায্য আসবে।

 

🌿 ৯. দেরিতে সুস্থতা = জান্নাতের রাস্তা হতে পারে

বুখারীতে এসেছে—

যে মুসলিমের গায়ে কাঁটা বিদ্ধ হয়, সেই কষ্টেও তার গুনাহ মাফ হয়।
(বুখারী ৫৩১৮)

আর এক মহিলা রাসূল ﷺ-কে বলেছিলেন, তিনি মৃগী রোগে ভুগছেন। রাসূল ﷺ বলেছিলেন, সবর করলে জান্নাত পাবে। তিনি জান্নাতকে বেছে নিয়েছিলেন।
(বুখারী ৫৩২৮)

 

উপসংহার:

  • আপনার সুস্থতা আসবে ইনশাআল্লাহ—তবে সময় লাগবে

  • সমস্যা বাড়লেও হতাশ হবেন না, কারণ এটা ইঙ্গিত যে রুকইয়াহ কাজ করছে

  • নিজের আমল ও নিয়ত ঠিক রাখুন

  • হাল ছেড়েবসবেন না, কারণ সাহায্য খুব কাছেই—

“أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ”
“জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।”
[সূরা বাকারা: ২১৪]

 কিভাবে বুঝবেন আপনার রুকইয়াহ সম্পূর্ণ হয়েছে?

📘 সূত্র:

বই: “রুকইয়াহ” (পৃষ্ঠা: ২৪৭–২৫১)
মূল থিম: উস্তায মুহাম্মাদ টিম হাম্বলের প্রবন্ধ ও লেকচার। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.