বদনজরের ইসলামি চিকিৎসা ও প্রতিকার – বিস্তারিত গাইড
বদনজর বা "Evil Eye" বাস্তব একটি বিষয়। হাদীস ও সাহাবাদের ঘটনা থেকেও আমরা এর প্রমাণ পাই। কখনো নিজের অজান্তেই কারো চোখের নজর অন্যের উপর প্রভাব ফেলে দেয় — যা হতে পারে অসুস্থতা, মানসিক অস্থিরতা, বাচ্চার কান্নাকাটি, দোকানের ব্যবসা ক্ষতি, এমনকি ঘর-বাড়ি বা গবাদিপশুর উপরেও।
এখানে থাকছে বদনজর থেকে মুক্তি পাওয়ার ইসলামি, সুন্নাহসম্মত এবং কার্যকর কিছু পদ্ধতি।
🔹 প্রথম পদ্ধতি: যদি জানা যায় কে নজর দিয়েছে
✅ হাদীস থেকে প্রমাণিত একটি পদ্ধতি হলো – যিনি নজর দিয়েছেন, তাকে অযু করতে বলা।
✅ অযুর পানিগুলো একটি পাত্রে জমা করে সেই পানি ভুক্তভোগীর গায়ে ঢেলে দেওয়া।
📌 কুলি করার পানি নেওয়া জরুরি নয়, মুখ-মুখ ধোয়ার পানিই যথেষ্ট।
এই পদ্ধতি সকলের জন্য প্রযোজ্য, হাদীসে আমির ইবনে রাবি’আ ও সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
🔹 দ্বিতীয় পদ্ধতি: দোয়া ও ফুঁ দেওয়া (বিশেষত শিশুদের জন্য)
রোগীর মাথায় হাত রেখে নিচের দোয়াগুলো পড়তে হবে এবং ফুঁ দিতে হবে। ৩–৭ বার পড়া উত্তম।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ
اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ
أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
📌 এরপর ৩ বা ৭ বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়তে পারেন এবং আক্রান্তকে ফুঁ দিয়ে দিতে পারেন।
🔹 তৃতীয় পদ্ধতি: গাছ, পশু, বাড়ি বা দোকানে নজর লাগলে
উপরের দোয়াগুলো পড়ে পানি ফুঁ দিয়ে—
✅ গাছের পাতায়
✅ পশুর গায়ে
✅ দোকানের চারপাশে
✅ ঘরের কোনায় ছিটিয়ে দিন।
🔹 চতুর্থ পদ্ধতি: সেলফ রুকইয়া (নিজে নিজে করবো কিভাবে?)
যদি না জানা যায় কার নজর লেগেছে, কিংবা অনেক দিনের সমস্যা হয় – তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
১. রুকইয়া শুনুন
প্রতিদিন ১–২ বার "Evil Eye" রুকইয়ার অডিও শুনুন।
লক্ষণ হতে পারে:
– ঘুম ঘুম ভাব
– মাথা ঝিমঝিম
– প্রসাব বেশি
– হাত-পা ভারী মনে হওয়া
🔁 লক্ষণ টের পেলেও, শুনতে থাকুন। এটি চিকিৎসার অংশ। লক্ষণ না থাকলে ধরে নিন আপনি নিরাপদ।
২. রুকইয়ার গোসল
প্রতিদিন বা একদিন পরপর করুন, যতদিন সমস্যা থাকে।
🪣 পানির বালতিতে পড়বেন:
-
দরুদ শরিফ ৭ বার
-
ফাতিহা ৭ বার
-
আয়াতুল কুরসি ৭ বার
-
ইখলাস, ফালাক, নাস – প্রত্যেকটা ৭ বার
-
শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭ বার
গোসলের সময় টিপস:
– যদি টয়লেট ও গোসল একসাথে হয়, বাহিরে পড়ে আসবেন
– এরপরই পানি দিয়ে গোসল করবেন (ফুঁ দেওয়া লাগবে না)
📌 চাইলে রুকইয়া অডিও শুনে এরপর গোসল করুন — এটা ভালো পদ্ধতি।
🔹 পঞ্চম পদ্ধতি: বদনজর থেকে নিরাপদ থাকার টিপস
১. সব কথায় আল্লাহর জিকির করবেন
২. সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন যিকর, বিশেষ করে:
-
তিন কুল (ইখলাস, ফালাক, নাস)
৩. মেয়েদের পর্দা ও সতর্ক থাকা জরুরি
৪. বাচ্চাদের ওপর নিয়মিত ফুঁ দেওয়া — রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন
৫. এই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যায় বাচ্চা ও নিজের জন্য পড়ুন:
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
শেষ কথা
বদনজরের প্রভাব বাস্তব। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই – ইসলাম আমাদের দোয়া ও রুকইয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা দিয়েছে।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হেফাজতে রাখেন – আমিন।
🖋️ কার্টেসি: শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (হাফিযাহুল্লাহ)