প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রুকইয়াহ করা যাবে কি?
অনেকে জানতে চান: "আমি প্রেগন্যান্ট। এই অবস্থায় রুকইয়াহ করা কি নিরাপদ? করা উচিত হবে কিনা?"
এই প্রশ্নের উত্তর সাধারণভাবে “হ্যাঁ, রুকইয়াহ করা নিষিদ্ধ নয়।” কিন্তু ব্যাখ্যাসহভাবে বিষয়টি বুঝলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ: রুকইয়াহ প্রেগন্যান্সির সময় নিষিদ্ধ নয়
ইসলামে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই যে গর্ভবতী অবস্থায় রুকইয়াহ করা যাবে না। রুকইয়াহ শরিয়াহসম্মত হলে তা সব সময়ই বৈধ। কিন্তু প্রতিটি নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি এক নয়, তাই এই সময় রুকইয়াহ করলে কী কী হতে পারে, তা একটু ভেবে দেখা দরকার।
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় রুকইয়াহ করলে কী হতে পারে?
গর্ভকালীন সময়ে নারীর শরীরে ও মনে নানা পরিবর্তন আসে। এই অবস্থায় রুকইয়াহ করলে নিচের কিছু শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:
-
মাথা ব্যথা
-
বমি ভাব বা বমি
-
পেট ব্যথা
-
জ্বর
-
দুর্বলতা
-
কখনো কখনো জিন হাজির হওয়া (যদি জিনের সমস্যা থাকে)
এগুলো সবাইর ক্ষেত্রে হবে এমন নয়। কারও ক্ষেত্রে কিছুই হতে নাও পারে।
সহ্যক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন
প্রত্যেক নারীর সহ্যক্ষমতা আলাদা। কেউ সামান্য জ্বরেও বিছানায় পড়ে যান, আবার কেউ প্রেগন্যান্ট হয়েও অফিস করেন, ঘরের সব কাজ করেন।
আপনি নিজেই জানেন আপনার শরীর কতটুকু সহ্য করতে পারে। কেউ বাইরে থেকে এসে তা নির্ধারণ করতে পারবে না।
রুকইয়াহ করবেন কি করবেন না?
আপনার সামনে দুটি অপশন:
১. আপনি যদি ভয় পান – যদি মনে হয়, শরীরে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে আপনি সামলাতে পারবেন না, তাহলে রুকইয়াহ না করাই ভালো।
২. আপনি যদি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন – যদি বলেন, “যা হয় হবে, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রুকইয়াহ করব”—তাহলে করুন। কারণ আল্লাহ বলেন:
"যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।" (সূরা তালাক: ৩)
যদি রুকইয়াহ করেও ক্ষতি হয়?
অনেক সময় এমনিতেও গর্ভপাত হয়ে যায়, ডাক্তাররাও সঠিক কারণ খুঁজে পান না। সেক্ষেত্রে যদি আপনার বিশ্বাস থাকে যে রুকইয়াহ করতে গিয়ে যা হবার তা হতোই—তাহলে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। আর যদি রুকইয়াহ না করে কষ্টে থাকেন, তাহলে সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।
মেডিকেল হেল্প নিতেও কোনো সমস্যা নেই
রুকইয়াহ ইসলামি চিকিৎসা, আর মেডিকেল চিকিৎসা আলাদা জিনিস। দুইটাই একসাথে চলতে পারে। আপনি চাইলে ডাক্তারি চিকিৎসার পাশাপাশি রুকইয়াহ করতে পারেন।
শেষ কথা: সিদ্ধান্ত আপনার
আপনি যদি প্রেগন্যান্ট থাকেন এবং স্বামী রুকইয়াহ করতে না পারেন বা করেন না, তাহলে বাইরের কাউকে দিয়ে করাতে চাইলে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। আমরা কেউ আপনাকে জোর করতে পারি না।
রুকইয়াহ করলে যদি আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তার দায় আমাদের নয়। আবার না করলে যদি পারিবারিক সমস্যায় পড়েন, তার দায়ও আমাদের নয়।
আমরা শুধু পরিস্থিতি বুঝিয়ে পরামর্শ দিতে পারি। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব পুরোপুরি আপনার।
উপসংহার
রুকইয়াহ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় করা যাবে। কিন্তু আপনি মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত কিনা, তা আপনার বিবেচ্য। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। আল্লাহ যেন আপনাকে সুস্থ রাখেন এবং আপনার গর্ভস্থ সন্তানকে নিরাপদ রাখেন—এই দোয়াই আমাদের।
কার্টেসি: আহমাদ রবীন হাফিজাহুলাহ
কীওয়ার্ড:
রুকইয়াহ, গর্ভবতী নারীদের রুকইয়াহ, প্রেগন্যান্সি এবং জিন, বদনজর রুকইয়াহ, ইসলামিক চিকিৎসা, রুকইয়াহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া