❓ পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়াহ করা যাবে কি?
বোনদের অনেকেই এই প্রশ্নটি করে থাকেন – “পিরিয়ড অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে?”
এই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করে আরও বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আপাতত আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি, সেই অনুযায়ী কিছু পরামর্শ নিচে তুলে ধরছি:
🔹 প্রশ্ন: পিরিয়ড চলাকালীন রুকইয়া শোনা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, রুকইয়ার আয়াত শোনা যাবে। কুরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। আয়েশা (রাঃ) এই সময়ে কুরআন শুনেছেন বলে প্রমাণ আছে। তবে পবিত্র অবস্থায় রুকইয়ার ইফেক্ট বেশি হয়, তাই সম্ভব হলে ওযু করে শোনা ভালো।
🔹 প্রশ্ন: নিরাপত্তার যিকর বা মাসনুন দোয়াগুলো পড়া যাবে?
উত্তর: নিঃসন্দেহে দোয়া, যিকর, দরুদ, তাসবিহ — সবই পড়া যাবে। বিশেষ করে হিফাজতের দোয়াগুলো পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় অবহেলা করলে শয়তান সুযোগ নিতে পারে।
🔹 প্রশ্ন: রুকইয়ার পানি খাওয়া বা গোসল করা যাবে?
উত্তর: যদি আগে থেকে রুকইয়ার পানি/তেল প্রস্তুত করা থাকে (অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় তাতে দোয়া-কালাম পড়া হয়ে থাকে), তাহলে তা খাওয়া ও ব্যবহার করা বৈধ।
তবে যদি প্রস্তুত না থাকে, আর আপনি নিজে পড়তে না পারেন, তাহলে:
- কেউ ফুঁ দিয়ে দিলে সেই পানি/তেল ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি নিজে কেবল ১০-১৫টি ছোট ছোট দোয়া এবং দরুদ শরিফ কয়েকবার পড়ে ফুঁ দিন।
- জিন বা জাদুর সমস্যা হলে বেশি করে দোয়া পড়া ভালো। তবে পিরিয়ড অবস্থায় রুকইয়ার আয়াত তিলাওয়াত করবেন না।
🔹 প্রশ্ন: রুকইয়ার গোসলের জন্য পানিতে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস ৭ বার করে পড়া যাবে?
উত্তর: যেহেতু এ সময় কুরআনের তিলাওয়াত নয়, বরং দোয়ার উদ্দেশ্যে কিছু আয়াত পড়া জায়েয – তাই পুরো রুকইয়া তিলাওয়াত না করে:
- শুধু দোয়া/যিকর হিসেবে কয়েকটি ছোট আয়াত (যেমন আয়াতুল কুরসি, তিনকুল) পড়ে পানিতে ফুঁ দিন
- আরও ভালো হয় – যদি কেউ অন্য কেউ পড়ে আপনাকে ফুঁ দিয়ে পানি তৈরি করে দেন
📌 নোট:
এই লিংকে কিছু দোয়া পাবেন। চাইলে অ্যাপ/পিডিএফ থেকেও দোয়া দেখে নিতে পারেন। শুরুতে দেওয়া ছোট ১০টি দোয়া তিনবার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিন। ইনশাআল্লাহ উপকার পাবেন।
📜 ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা (দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া)
প্রশ্ন: পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং চার কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়া যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, পড়া যাবে — যদি নিয়ত থাকে জিন/শয়তান থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে (যিকর বা দোয়া হিসেবে)। কারণ এসব আয়াত আল্লাহর প্রশংসা বা সুরক্ষা কামনা বোঝায়।
তবে কুরআনের সাধারণ তিলাওয়াত বা এমন আয়াত পড়া যাবে না যেগুলো হুকুম-আহকাম বা কাহিনির তথ্য দেয়।
📚 সূত্র: দারুল ইফতা, দারুল উলুম দেওবন্দ
ফাতওয়া নং: 212/227/N=1433
“আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে সুরক্ষার জন্য পড়ছেন, তাহলে দোয়া হিসেবে আয়াতুল কুরসি, তিন কুল পিরিয়ডের সময়েও পড়া যাবে। তবে সুরা কাফিরুন পড়া যাবে না, কারণ সেটা এই শর্ত পূরণ করে না।”