জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ও ইসলামিক প্রতিরোধের উপায়:
জ্বিনের আক্রমণ বা দখল আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা। যদিও বেশিরভাগ মানুষ শুধুমাত্র পুরো শরীর পজেসড হলে জ্বিনের আক্রমণ বুঝে থাকে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শরীরে জ্বিন ঢুকে যাওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার হতে পারে, যা ধীরে ধীরে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি ঘটাতে পারে।
এখানে আমরা জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ, সম্ভাব্য কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণসমূহ
১. নিদ্রাহীনতা: সারারাত বিশ্রাম নেওয়া হলেও ঘুম হয় না।
২. উদ্বিগ্নতা: রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায়।
৩. বোবায়ধরা: ঘুমের সময় নড়াচড়া করতে না পারা।
৪. ঘুমের মাঝে চিৎকার বা হাসি-কান্না: ঘুমন্ত অবস্থায় অস্বাভাবিক আওয়াজ করা।
৫. Sleepwalking: ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটাহাঁটি করা।
৬. স্বপ্নে আক্রমণ: বিশেষত কুকুর, বিড়াল, সাপ, সিংহ ইত্যাদি দ্বারা আক্রমণের স্বপ্ন দেখা।
৭. উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়া: স্বপ্নে নিজেকে উচ্চ স্থানে থেকে পড়তে দেখা।
৮. পরিত্যক্ত স্থান বা মরুভূমির সড়ক দেখার স্বপ্ন: গোরস্থান বা অচেনা স্থানে হাঁটাহাঁটি করা।
৯. বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা: অনেক লম্বা, খাটো বা অস্বাভাবিক রঙের মানুষ দেখা।
১০. জ্বিন বা ভুত দেখা: জ্বিন বা ভুতের উপস্থিতি অনুভব করা।
ঘুম ব্যতীত অন্যান্য লক্ষণসমূহ
১. দীর্ঘ মাথাব্যথা: কোনো শারীরিক কারণে নয়, সাধারণ মাথাব্যথা।
২. ইবাদত বিমুখতা: নামাজ বা কোরআন তিলাওয়াতে আগ্রহ হারানো।
৩. মেজাজের অস্থিরতা: মনোযোগ না থাকা, অস্থির মেজাজ।
৪. অলসতা: সব সময় অবসন্ন বা ক্লান্ত অনুভব করা।
৫. মৃগীরোগ: হঠাৎ অস্বাভাবিক শারীরিক আচরণ।
৬. শরীরের কোনো অঙ্গের ব্যথা বা অক্ষমতা: ডাক্তাররা কারণ খুঁজে না পেলে, এটি জ্বিনের আক্রমণ হতে পারে।
মন্তব্য: উপরের লক্ষণগুলো যদি এক বা দুইদিনের মধ্যে ঘটে, তাহলে তেমন চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি দীর্ঘদিন ধরে এমন লক্ষণ দেখা যায়, তবে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।
জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার ইসলামিক উপায়
জ্বিনের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ইসলামী শরীয়তের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় রয়েছে। নিচে কিছু মৌলিক উপায় উল্লেখ করা হলো:
-
জামা'আতে নামাজ আদায় করুন: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং জামা'আতে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি হয়।
-
গানবাজনা থেকে বিরত থাকুন: ইসলামিক দৃষ্টিতে, গানবাজনা শয়তানের কাছাকাছি নিয়ে যায়।
-
পাকপবিত্র থাকা: ঘুমের আগে অযু করে বিছানায় শোয়া উচিত।
-
আয়াতুল কুরসি পড়া: ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করা।
-
বিসমিল্লাহ বলা: সকল কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা, বিশেষত খাবার খাওয়ার সময়, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করার সময়।
-
কুকুর, বিড়াল বা সাপ না মারার পরামর্শ: সাপ মারতে চাইলে, আগে তিনবার উচ্চস্বরে "জ্বিন হলে চলে যাও" বলুন।
-
প্রসাবের স্থান থেকে বিরত থাকুন: গর্ত প্রসাব না করা হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।
-
দু'আ পড়া: ঘর প্রবেশ করার সময় বা বের হওয়ার সময়, সহবাসের সময় দু'আ পড়ুন, না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলুন।
-
শিশুদের সুরক্ষা: সন্ধ্যার সময় শিশুকে বাইরে যেতে না দেয়া এবং জানালা বন্ধ রাখা।
-
টয়লেটে দু'আ পড়া: টয়লেটে প্রবেশের সময় ইসলামী দোয়া পড়া।
-
প্রতিদিন "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ" ১০০ বার পড়া: প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ" পাঠ করা।
-
সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস: প্রতিদিন রাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে পাঠ করা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি আপনার জীবনে প্রবাহিত শান্তি এবং সুরক্ষা এনে দিবে।
উপসংহার
জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ইসলামিক শিক্ষাগুলি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, নিয়মিত নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়া জরুরি। আল্লাহ আমাদের সবার হেফাজত করুন।
কার্টেসিঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ